,

সবকিছুর দাম বাড়লেও চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না হবিগঞ্জে শ্রমিক আন্দোলনে অচল ২৪ চা-বাগান

মনসুর আহমেদ/পিন্টু অধিকারী : দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে সারাদেশের সাথে ধর্মঘটে নেমেছেন হবিগঞ্জের চা শ্রমিকরাও। গতকাল শনিবার জেলার বিভিন্ন বাগানে ধর্মঘট পালন করেন তারা। এসময় বিক্ষোভও করেন শ্রমিকরা। এদিন সকাল ১০টা থেকে হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানে বিক্ষোভ ও মানববন্দন করেন শ্রমিকরা। পরে দুপুর ১২টার দিকে চুনারুঘাটে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের চান্দপুর এলাকায় অবরোধে বসেন তারা। দুপুর পৌনে ২টার দিকেও অবরোধ চলছিল। সেখানে ২৪টি বাগানের শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা দেড়টার মধ্যে সেখানে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক সমবেত হন। এ আন্দোলন থেকে সড়ে যাওয়ার জন্য সরকারের শ্রম অধিদপ্তরের অনুরোধও রক্ষা করেনি শ্রমিকরা।
চা শ্রমিকরা জানান, তাদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে প্রতি বছর চা শিল্পে রেকর্ড চা উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালে দেশের ইতিহাসে চাযের রেকর্ড পরিমান উৎপাদন ৯৬ মিলিয়ন কেজি চা হয়েছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন আজও হয়নি। চা শ্র্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দুটি চুক্তি বাস্তবায়ন করা হলেও বারবার মার খাচ্ছেন চা শ্রমিকরা।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, একযোগে দেশের ২৪১টি চা বাগানে মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন চলছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে যাওয়ার পরও চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। গত বছর চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের চুক্তি স্বাক্ষর অনুযায়ী দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার কথা। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য গত শুক্রবার পর্যন্ত চারদিন ধরে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। গতকাল সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে তারা কাজে ফিরবেন না। প্রয়োজনে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। এজন্য অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে বাগানগুলোতে পুরোপুরিভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন শ্রম অধিদপ্তর আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করেছে। তারা আগামী ২৯ আগস্ট ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সময় চেয়েছে। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি। ‘যদি কর্তৃপক্ষ দাবি না মানে তাহলে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করা হবে। চা শ্রমিকরা তাদের ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে এই আন্দোলন করে আসছেন। এই দাবি যৌক্তিক হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও তাদের সমর্থন দিয়েছেন।’
তেলিয়াপাড়া চা বাগান সেক্রেটারী লালন পাহান বলেন, বাংলাদেশ চা সংসদ সরকারের কাছে আমাদের দাবী ৩০০ টাকা মজুরী না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগানে কাজ বন্ধ রেখে পূর্ণ দিবস আন্দোলন চলবে। বর্তমান সময়ে আমরা যে মজুরি পাই তা দিয়ে জীবনের চাকা চালানো প্রায় অসম্ভব। শ্রমিকদের প্রতি এটা অমানবিক আচরন ছাড়া কিছু নয়। বিশ্ব বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কমপক্ষে ৩শত টাকা মজুরি করতে হবে।
২২টি চা বাগানের ভ্যালীর সভাপতি রবীন্দ্র গৌড় বলেন, বর্তমান সময়ে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা একাধিক সময়ে বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করছি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী মজুরী বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তি ভঙ্গ করছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির এ দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে চা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।


     এই বিভাগের আরো খবর